বিডিনিউজ ১০ ডটকম, ইসলাম: শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) পবিত্র রমজানের চাঁদ দেখা গেলে শনিবার থেকে রোজা শুরু হবে ইনশাআল্লাহ। যদিও মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গোটা বিশ্ব উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় অতিবাহিত করছে। তারপরও মুসলিম উম্মাহ রমজানকে স্বাগত জানানোর জন্য অধির আগ্রহের অপেক্ষায়।
মহান রবের দরবারে বিনীত প্রার্থনা- হে দয়াময় প্রভু! তোমার এ দুর্বল বান্দাদের পাপ ক্ষমা করে রমজানের কল্যাণে বিশ্ব থেকে বালা-মুসিবত দূর করে দাও। রমজানের জান্নাতি আবহে তোমার নিরাপত্তার চাদরে মুসলিম উম্মাহকে জড়িয়ে নাও।
রমজান সিয়াম সাধনার মাস। আল্লাহ তাআলার একান্ত সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য পাওয়ার মাস রমজান। সব গোনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার মাস রমজান। এ মাসের রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত লাভে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন মুমিন মুসলমান।
শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেলে সন্ধ্যা থেকেই শুরু হবে রমজান মাস। রমজানের বিশেষ ইবাদত তারাবিহ পড়বে মুমিন। শনিবার প্রথম রোজা পালন করবো আমরা। রমজানের শুরু থেকেই আমরা তার অফুরন্ত রহমত লাভে ধন্য হওয়ায় মনোযোগী হবো। তার রহমতে নিজেদের জড়িয়ে নেয়ার প্রার্থনা করবো।
রমজান মাসেই মুমিন মুত্তাকির আধ্যাত্মিক বাগানে ফুটবে নব-বসন্তের ফুল। জান্নাতি পরিবেশে প্রত্যেক মুমিন-মুত্তাকির বান্দার হৃদয় হয়ে উঠবে আলোকিত। আল্লাহর রহমতের বারিধারায় সিক্ত হবে মুমিনের অন্তর। রহমতের সুধা পান করে তৃষ্ণা মেটাবে মুমিন।
রমজানের রহমত থেকে বঞ্চিত না হয় তার ভয় ও ভালোবাসায় রোজার ফজিলত লাভে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা করি। যেভাবে রহমত এসেছিল আমাদের আগের যুগের নবি-রাসুলদের উম্মতের উপর। আল্লাহ মুমিনকে অভয় দিয়ে ঘোষণা করেন-
‘হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য সেভাবেই রোজা রাখাকে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য বিধিবদ্ধ ছিল এ রোজা। যাতে তোমরা আল্লাহ ভয় অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ১৮৩)
প্রতি বছরই রহমতের বারতা নিয়ে আমাদের মাঝে রমজান আসে। কিন্তু আমরা কি ইবাদত-বন্দেগির ও তার নির্দেশ মেনে রমজানের রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত লাভ করে পারি? মহান আল্লাহ এ মাসে তার সব বান্দার জন্য যে সুযোগ দিয়ে থাকেন। তার নেক বান্দারা যে সুযোগে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করে থাকে। হাদিসে এসেছে-
– প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘প্রত্যেক জিনিসের জন্য নির্দিষ্ট দরজা থাকে আর ইবাদতের দরজা হচ্ছে রোজা।’ (জামেউস সগির)
– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ এবং (জাহান্নামের) আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি নিরাপদ দুর্গ।’ (মুসনাদ আহমদ)
রোজা যেমন ইবাদতের দরজা, গোনাহের ঢাল। আবার তা জাহান্নামে আগুন থেকে মুক্তির মাসই নয় বরং অশান্তির সব আগুন থেকে মুক্তির মাসও এটি। তাই রমজানের সব কল্যাণ লাভই হবে মুমিনের একমাত্র কাজ।
তারপরও আমাদের অনেকেই এমন আছেন, যারা রমজানের এ রহমতের সময়ও ইবাদত-বন্দেগি থেকে গাফেল। অন্যান্য মাসের মতই এই পবিত্র মাসটিকে হেলায় কাটিয়ে দেয়। এ ভুলটি যেন আর না হয়।
রমজান লাভে রজব-শাবানের দোয়া ও আল্লাহর রহমতে যেহেতু এ পবিত্র মাসটি আমরা পেয়েছি, তাই রমজানের ঘোষিত ফজিলত ও মর্যাদা লাভে সৌভাগ্যবান হওয়ার চেষ্টা করি। এ কথা ভেবে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি যে, এমন অনেকেই রমজানের অপেক্ষা ও আশায় ছিল যারা আজ বেঁচে নেই। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ওপারের জীবনের সুন্দর ভুবনে। আল্লাহ তাদের কবরে রমজানের জান্নাতি পরিবেশ তৈরি করে দিন।
সুতরাং রমজানের পুরো উপকারিতা ও ফজিলত লাভে আমাদের উচিত হবে- পবিত্র রমজানের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব বুঝে রমজান থেকে বরকত লাভ করা। আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা লাভ করা। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণে নিজেদের জীবনে রাঙিয়ে নেয়া।
আমরা যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রমজানের ইবাদতের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই তিনি রমজানে কত বেশি নফল ইবাদত আর দান-সাদকা করতেন। সাধারণ সময়ের তুলনায় রমজানে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইবাদত আর দান-সাদকা বেশি গতি লাভ করতো। তিনি এ মাসে অনেক বেশি ইবাদত বন্দেগিতে কাটাতেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নফল নামাজ আর দোয়ার আহাজারিতে রমজানের নিঝুম রাতগুলোও তাঁর সঙ্গে জেগে থাকতো। এ ছাড়াও তিনি রমজানজুড়ে কুরআন শিক্ষা, শেখানো ও শোনার প্রতি অনেক বেশি গুরুত্ব দিতেন।
সুতরাং আমাদের উচিত, পবিত্র রমজানের পরিপূর্ণ ফজিলত ও উপকারিতা লাভ করা। রমজানের কল্যাণ দ্বারা নিজেদের সুশোভিত করা। আল্লাহ আকবার ধ্বনিতে প্রতিধ্বনিত ও কুরআন তেলাওয়াতের গুঞ্জনে প্রতিটি ঘরকেই মুখরিত করে তোলা।
রাহমানুর রাহিম, হে আল্লাহ! কুরআন নাজিলের এ মাসকে আমাদের জন্য কুরআনের আলোয় আলোকিত করে দিন। গোটা বিশ্বকে মহামারি করোনাসহ সব বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি দিন। আমিন।